মুজিবনগর সরকারের সংকট ও সাফল্য
মোনায়েম সরকার:
ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্তে স্নাত পুণ্যভ‚মির নাম বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। দীর্ঘ নয় মাসে রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যে নবজাত রাষ্ট্র পৃথিবীর বুকে মাথা তুলে দাঁড়ায় তাঁর অতীত ইতিহাস বড়ই করুণ ও অশ্রæসিক্ত। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনের এই গৌরবদীপ্ত মুহূর্তে যখন অতীত দিনের কথা মনে করছিলাম তখন চোখের সামনে ভেসে উঠছিল মুজিবনগর সরকারের নানামুখি সংকট ও অবিশ্বাস্য সাফল্যগাথা। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধার মতো আমিও বিনিদ্ররাত্রিযাপন করেছি বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য। ক্ষুধামুক্ত, ধর্মনিরপেক্ষ, সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ গঠন করার লক্ষ্যে সেদিন কোটি কোটি বাঙালি জীবন বাজি রেখে শত্রæর মুখোমুখি যুদ্ধ করেছিল। সেই ভয়ঙ্কর যুদ্ধ পরিচালনা করেছিল ‘মুজিবনগর সরকার’। কিভাবে দ্রæততম সময়ের মধ্যে মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়ে স্বল্পলোকবল নিয়েই মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সংক্ষেপে সেই ইতিহাস তুলে ধরতে চাই।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় বাঙালি জাতির মনে রাষ্ট্রশাসনের অভিপ্রায় জাগ্রত করে। কিন্তু ক্ষমতালোভী পাকিস্তানি শাসকবর্গ বাঙালিদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে একের পর এক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের ৭ তারিখে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। তাঁর এই ভাষণে তিনি সুকৌশলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং দশ লক্ষ লোকের ওই গণসমাবেশে গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধু সেদিন সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা করলে পাকিস্তানি সরকার সমাবেশে গুলিবর্ষণ করে অসংখ্য মানুষ হত্যা করতো। এমনই পরিকল্পনা ছিল পাকিস্তানিদের। বঙ্গবন্ধু নিজেও সে-সম্পর্কে অবগত ছিলেন। এ কারণেই অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে তিনি উচ্চারণ করেছিলেনÑ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,/এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ আমি নিজেকে এ কারণে সৌভাগ্যবান মনে করছি যে, সেদিনের সেই ঐতিহাসিক ভাষণ স্থপতি মজহারুল ইসলাম ও আমি দূর থেকে মাইকের কাছে টেপরেকর্ডার ধরে রেকর্ড করেছিলাম।
বস্তুতপক্ষে, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পরেই বাংলাদেশ পুরোপুরি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে চলতে শুরু করে। বাংলার মানুষ বুঝে ফেলে পাকিস্তানি সামরিক সরকার জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। তাই তারা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে স্বাধীনতা-সংগ্রামের প্রস্তুতি নিতে থাকে। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়ে বঙ্গবন্ধু চুপ করে বসে থাকেননি। তিনি ভবিষ্যতের ভয়াবহ যুদ্ধের কথা নানা মাধ্যম থেকে আঁচ করতে পেরেছিলেন। তাই বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত চার সহযোগী, পরবর্তীতে জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে নিয়ে আওয়ামী লীগের হাইকমাণ্ড গঠন করেন।
এদের উপর নির্দেশ দেন বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার। জীবনবাজি রেখে জাতীয় চারনেতা বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তাঁর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন। ২৫ মার্চ সকাল থেকেই বাংলাদেশের থমথমে পরিস্থিতি টের পাওয়া যায়। এইদিন সকাল থেকে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাসভবনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জরুরি পরামর্শ দিয়ে আত্মগোপনের নির্দেশ দেন বঙ্গবন্ধু। নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ পেয়ে যে-যার মতো নিরাপদ স্থানে সরে পড়েন। ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যা শুরু হলে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার কিছুক্ষণ পরেই বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানিদের হাতে নিজ বাড়িতে বন্দি হন।
বঙ্গবন্ধু যখন পাকিস্তানিদের হাতে বন্দি তখন তাঁর সহচরগণ ভারতের মাটিতে অবস্থান করে স্বাধীন বাংলা সরকার গঠনের ব্যাপারে নিরলস পরিশ্রম করেন। ২৫ মার্চ যখন আক্রমণ হয় বাংলার নিরীহ মানুষের উপর, তার কিছুদিন পূবেই বঙ্গবন্ধু কলকাতার ৩ নম্বর রাজেন্দ্রপ্রসাদ রোডের চিত্ত সুতারের বাড়ি নির্বাসিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের থাকার জন্য ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু কোনো ঠিকানাই তাজউদ্দীন আহমদের কাছে লেখা ছিল না। তিনি চিত্ত সুতারকে পেলেন না। তাকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে কয়েকজন বিএসএফের জোয়ান সীমান্তের ওপারে নিয়ে যান। সেখানে তাজউদ্দীন আহমদকে অভ্যর্থনা জানান বিএসএফের আঞ্চলিক প্রধান গোলক মজুমদার। গোলক মজুমদার তাজউদ্দীন আহমদকে পেয়ে হাতে যেন আকাশের চাঁদ পেয়ে যান। গোলক মজুমদার পরবর্তীতে ইন্দিরা গান্ধী সরকারের উর্ধ্বতন ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি রাশিয়ান কার্গো বিমানে অতীব গোপনে কলকাতা থেকে তাজউদ্দীন আহমদকে দিল্লি নিয়ে যান। এরপর একের পর এক মিটিং চলতে থাকে। মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয় সুশৃঙ্খলভাবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করতে হলে সরকার গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এ প্রসঙ্গে শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি পিএন হাকসারের ভ‚মিকা উল্লেখযোগ্য।
বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে কিভাবে এই ‘প্রবাসী সরকার’ গঠিত হবে তা নিয়ে তাজউদ্দীন সাহেব খুবই চিন্তায় পড়েন। মুজিবনগর সরকার গঠিত হলে এর প্রতিক্রিয়া কি হবে তা তাজউদ্দীন আহমদ অনুমান করতে পেরেছিলেন। তাই তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে প্রথম প্রথম কিছুটা দ্বিধান্বিত ছিলেন। সেদিন যদি সমস্ত অভিযোগ, অপমান সহ্য করে অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে তাজউদ্দীন আহমদ মুজিবনগর সরকারের দপ্তর আগলে না রাখতেন, তাহলে বাংলাদেশ আজো স্বাধীন হতো কিনা সন্দেহ। ঢাকাস্থ তদানীন্তন ভারতীয় হাই কমিশনার সুবিমল দত্তকে তাজউদ্দীন আহমদ একবার একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। সেই সাক্ষাৎকারে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, কিভাবে তিনি মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সেই সাক্ষাৎকারে তিনি সুবিমল বাবুকে বলেছিলেন, ‘আমি অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যে ধরনের নিঃসঙ্গতায় সেই ৯ মাস কাটিয়েছিলাম, বঙ্গবন্ধুও সরকার পচিালনা করতে গিয়ে খুবই একাকীত্ববোধে ভুগছেন। এক সময় যারা তার খুব কাছের লোক ছিল, আজ তারা তাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেছে। অনেকে গেছে তাদের রাজনৈতিক উচ্ছাকাক্সক্ষার জন্য। কয়েকজন গেছে মতের অমিলের জন্য, যদিও তারা মন-প্রাণ দিয়ে তাকে ভালোবাসেন এবং তার জন্য তারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতেও রাজি।’ মুজিবনগর সরকার গঠনের শুরু থেকেই খন্দকার মোশতাক ও শেখ ফজলুল হক মনি তাজউদ্দীন আহমদকে কোণঠাসা করে রাখার চেষ্টা করেন। তাজউদ্দীন আহমদ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এসব সমস্যা মোকাবিলা করেন। এ জন্য মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস তিনি যে পরিশ্রম করেন তা অবর্ণনীয়।
একদিন আমি ৮ নম্বর থিয়েটার রোডের অফিসে যাই প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে দেখা করতে। সেদিন কথায় কথায় তাজউদ্দীন ভাইকে বলিÑ আচ্ছা তাজউদ্দীন ভাই, আপনি হাফশার্ট পরেন কেন, মুজিবকোর্ট পরতে হবে সেই কারণে? তাজউদ্দীন ভাই আমাকে বললেন, ‘ওঠো’। আমি উঠলাম। এরপর তিনি আমাকে তার বাথরুমে নিয়ে গেলেন। সেখানে গিয়ে দেখলাম আরেকটা হাফশার্ট ধুয়ে তিনি হ্যাঙ্গারে টাঙিয়ে রেখেছেন। এই দুটো শার্ট পরেই তিনি দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেন। মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলেন দেশ স্বাধীন না করে কেউ পরিবারের সঙ্গে থাকবেন না। সেদিন এ শপথ অনেকেই রক্ষা করেননি, কিন্তু তাজউদ্দীন আহমদ এই অঙ্গীকার রক্ষা করেছিলেন।
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল। বেলা ১১টা। এই দিন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার মুক্তাঞ্চল ভবের পাড়ার বৈদ্যনাথ তলায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী মুজিবনগরে বাংলাদেশ সরকার শপথ গ্রহণ করে। অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ, অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কর্ণেল ওসমানী ও অন্যান্যদের নিয়ে বৈদ্যনাথ তলায় মঞ্চে এলেন। আশেপাশের গ্রাম থেকে চেয়ার আনা হয়েছে। সংগৃহীত চেয়ারগুলোর একটাও পূর্ণাঙ্গ নয়। কোনটার হাতল নেই, কোনটার বা পা নেই। ক্যাপ্টেন মাহবুব আর জনাব তওফিক এলাহী চৌধুরী তখন অনুষ্ঠানসূচি প্রণয়নে ব্যস্ত। গার্ড অব অনার দেয়ার জন্য আনসার বাহিনী প্রস্তুত। ক্যাপ্টেন মাহবুব তাদের নিয়ে গার্ড অব অনার দিলেন অস্থায়ী সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতিকে। প্রায় হাজার দুই লোক এসেছিল অনুষ্ঠানে দর্শক হিসেবে। শতাধিক বিদেশি সাংবাদিক, ফটোগ্রাফার ও টিভি ক্যামেরাম্যান এসেছেন। গার্ড অব অনার ও জাতীয় সঙ্গীতের পর নেতৃবৃন্দ মঞ্চে বসলেন।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ স্বাধীনতা সনদের স্বপক্ষে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপস্থিত জনতা ও সাংবাদিকদের সঙ্গে তাঁর মন্ত্রিসভা-সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেন। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ তাঁর ভাষণে বলেন, ‘পৃথিবীর মানচিত্রে আজ যে নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হলো তা চিরদিন থাকবে। পৃথিবীর কোন শক্তি তা মুছে দিতে পারবে না। পাকিস্তান আজ মৃত এবং অসংখ্য আদম সন্তানের লাশের তলায় পাকিস্তানের কবর রচিত হয়েছে। শত সহস্রর মানুষের মৃত্যু বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে দুর্লঙ্ঘ্য প্রাচীর হয়ে থাকবে। স্বাধীন বাংলাদেশ আজ একটা বাস্তব সত্য। সাড়ে সাত কোটি বাঙালি তাদের অজেয় মনোবল ও সাহসের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছে এবং প্রতিদিন হাজার হাজার বাঙালি সন্তান রক্ত দিয়ে যাচ্ছে। কেউই নতুন জাতিকে ধ্বংস করতে পারবে না। আজ হোক, কাল হোক, দুনিয়ার ছোট বড় প্রতিটি রাষ্ট্রই এই নতুন জাতিকে গ্রহণ করবে। স্থান দিতে হবে বিশ্ব রাষ্ট্রপুঞ্জে। আমাদের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামকে সোভিয়েট ইউনিয়ন, ভারত এবং বিশ্বের অন্যান্য বহু দেশের স্বাধীনতা প্রিয় মানুষ যে সমর্থন দিয়েছেন, তা আমরা চিরকৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি। গণচীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, গ্রেটবৃটেন ও অন্যান্য দেশের কাছে অনুরূপ সমর্থন আশা করি। তা পেলে তাঁদের অভিনন্দন জানাবো।
এই সভায়ই কর্নেল আতাউল গণি ওসমানীকে মুক্তি বাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী খোন্দকার মুশতাক আহমদ, মন্ত্রী পরিষদের সদস্য জনাব এম. মনসুর আলী ও জনাব এ.এইচ.এম. কামরুজ্জামান। কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমাধীন ভবেরপাড়া গ্রামের বৈদ্যনাথতলার যে ছায়াঘেরা আম্রকাননে অনুষ্ঠিত সেই ঐতিহাসিক ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ এই স্থানের নতুন নামকরণ করেনÑ মুজিবনগর। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আব্দুল মান্নান এমএনএ (টাঙ্গাইল)। মুজিব নগরে শপথ অনুষ্ঠানে দেশী, ভারতীয় ও বিদেশি একশ’ সাতাশ জন সাংবাদিক, শ্রী ফণিভূষণ মজুমদার, আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ও সোহরাব হোসেন সহ যশোর খুলনার বহু গণপ্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
গগনবিদারী স্লোগান বিপুল করতালির মাঝে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বাধীনতা সনদটি পাঠ করেন আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির চিফ হুইপ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউসুফ আলী। এই আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র পাঠের মধ্যে দিয়ে ২৬ মার্চ জাতির জনক রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের যে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন তা সাংগঠনিক রূপ নেয় এবং বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়। বাংলাদেশ পঞ্চাশ বছরে পা দিয়েছে। মুজিবনগর সরকারেরও (১০ এপ্রিল, ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত) আজ পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হচ্ছে। যে ‘মুজিবনগর সরকার’ অসংখ্য প্রতিক‚লতার মধ্যেও বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলÑ সেই সংগ্রামী মুজিবনগর সরকারকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। আমরা যেন কোনোদিনই সেই সরকারের অবদানের কথা ভুলে না যাই। সেই সঙ্গে যেন বিস্মৃত না হইÑ ত্রিশ লক্ষ শহিদের জীবনদান ও আড়াই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম বিসর্জনের নির্মম কাহিনী। জয় বাংলা।
০৭ এপ্রিল, ২০২১
মোনায়েম সরকার : রাজনীতিবিদ, লেখক, কলামিস্ট, প্রাবন্ধিক, গীতিকার ও মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ।